প্রকাশিত: Thu, Jul 20, 2023 10:24 PM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 12:00 AM
কূটনীতিকদের বিবৃতি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
সোহেইল জাফর: [১] হিরো আলমের ওপরে হামলা নিয়ে ঢাকায় ১২ দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
কূটনীতিকদের জন্য প্রণীত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন ঠরবহহধ ঈড়হাবহঃরড়হ ড়হ উরঢ়ষড়সধঃরপ জবষধঃরড়হং ১৯৬১ সব দেশের কূটনীতিকরা মানতে বাধ্য। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য যে দেশে এই আইন লঙ্ঘিত হয়, সেই দেশ নিজেই ওই কূটনীতিকদের বিচার করতে পারবে।
১৯৭৯ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপ্লোমেটিক অ্যান্ড কনস্যুলার স্টাফ ইন তেহরান মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বলেন, কোনো বিদেশি দূত বা দূতাবাস তাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করে তার অপব্যাখ্যা করলে স্বাগতিক রাষ্ট্রের পূর্ণ অধিকার রয়েছে সংশ্লিষ্ট দূত বা দূতাবাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার, যা প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন স্বীকৃত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকদের বিচার ও শাস্তি দিয়েছে। বিষয়টি একেবারে নজিরবিহীন নয়।
তবে সাধারণভাবে সৌজন্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট দূতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বা বহিষ্কার করা হয়।
[২] ১১ টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিবৃতিতে বলছে- “আমরা ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলমের, যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত- ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার দাবি জানাই। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।”
এই বিবৃতি দিয়ে দূতাবাসগুলো কী কী অপরাধ করলো?
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের সাথে আন্তর্জাতিক কূটনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ গণতন্ত্র যদি না-ও থাকতো, তাতেও কূটনীতিকদের কিছু যায় আসে না। পৃথিবীর বহু দেশে যেখানে গণতন্ত্র নেই বা ছিল না, সেসব দেশে আমেরিকা, কানাডাসহ অনেক দেশ কূটনীতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সৌদি আরবে রাজতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও আমরেকা সেখান থেকে মিশন গুটিয়ে নেয়নি। চীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই বলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।
এই উপনির্বাচন বাংলাদেশের একেবারেই নিজস্ব ব্যাপার। উপনির্বাচনে হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল, আবার ফিরে পাওয়া, জাতীয় পার্টির দুই অংশের বিরোধ এবং একই দলেই দুই প্রার্থী দেওয়া- এই সবই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপার। রাষ্ট্রদূতেরা যদি জাতীয় পার্টির দেবর-ভাবীর বিরোধ মেটানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে তা শুধু শিষ্টাচারের লঙ্ঘনই হবে না, তা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ।
কারণ, ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১.১ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ঞযবু ধষংড় যধাব ধ ফঁঃু হড়ঃ ঃড় রহঃবৎভবৎব রহ ঃযব রহঃবৎহধষ ধভভধরৎং ড়ভ ঃযধঃ ঝঃধঃব.
অৎঃরপষব ৪১: ডরঃযড়ঁঃ ঢ়ৎবলঁফরপব ঃড় ঃযবরৎ ঢ়ৎরারষবমবং ধহফ রসসঁহরঃরবং, রঃ রং ঃযব ফঁঃু ড়ভ ধষষ ঢ়বৎংড়হং বহলড়ুরহম ংঁপয ঢ়ৎরারষবমবং ধহফ রসসঁহরঃরবং ঃড় ৎবংঢ়বপঃ ঃযব ষধংি ধহফ ৎবমঁষধঃরড়হং ড়ভ ঃযব ৎবপবরারহম ঝঃধঃব. ঞযবু ধষংড় যধাব ধ ফঁঃু হড়ঃ ঃড় রহঃবৎভবৎব রহ ঃযব রহঃবৎহধষ ধভভধরৎং ড়ভ ঃযধঃ ঝঃধঃব.
রাষ্ট্রদূতেরা কি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবেন যে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ওপর আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ বিপর্যয় বা কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যু বিঘ্নিত বা ব্যাহত হতে পারে?
দ্বিতীয়ত, এই বিবৃতি বাংলাদেশের আইন-আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন, এটিও আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ।
হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তিনি আদালতে গেছেন। আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তার ওপর হামলা হয়েছে, তিনি মামলা করেছেন। মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে চলছে।
আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, যারা কোনো দেশে কূটনীতিক সুবিধা ভোগ করবেন, ওই দেশের আইন ও বিধি-বিধানের প্রতি সম্মান জানানো কূটনীতিকদের দায়িত্ব।
এ আইনের তোয়াক্কা না করে কূটনীতিকরা আইনী প্রক্রিয়া চলমান এমন একটি বিষয়ে মন্তব্য করলেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ।
[৩] কূটনীতিক শিষ্টাচার ও নিয়মনীতি লঙ্ঘনের দায়ে পৃথিবীর বহু দেশে বহু কূটনীতিকের শাস্তি হয়েছে। ভিয়েনা কনভেনশনেই দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে যেসব কূটনীতিক আইন লঙ্ঘনের সাথে জড়িত, তাদেরকে স্বাগতিক দেশে বিচারের আওতায় আনার বিধান রাখা হয়েছে।
১৯৮৫ সালে ব্রিটিশ আদালত ইউসুফ নামে এক নাইজেরিয়ান কূটনীতিককে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। ২০১৩ সালে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানীকে গ্রেফতার বেশ আলোড়ন তুলেছিল। আর বহিষ্কার তো নিয়মিত ব্যাপার। আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন নিয়মিতভাবেই কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে চলেছে। এমনকি বাংলাদেশও বিভিন্ন সময়ে একাধিক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কারণে দুই পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। তার আগে পাকিস্তানের এক উপরাষ্ট্রদূতকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
[৪] পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো উপনির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিবৃতি দেওয়ার সাহস পায়নি। কোনো কূটনীতিকই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকে নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ বরাবর কূটনীতিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা দেখিয়ে এসেছে বলে, তারা এ সুযোগ নিতে পেরেছে। আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ সে দেশের বিরোধী দলই করছে। পৃথিবীর কোনো দূতাবাস এ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। ২০১৯ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময় সহিংসতায় সরকারি হিসেবেই ৭৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ ভারতে কর্মরত কোনো দূতাবাস এ নিয়ে টু শব্দটিও করেনি।
[৫] পৃথিবীর কোথাও যা হয় না, তা বাংলাদেশে কেন হচ্ছে? কারণ বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি এবং রাজনৈতিক দলগুলো বার বার কূটনীতিকদের কাছে ধর্ণা দেয়। কূটনীতিকরা হলেন আলমারিতে তুলে রাখা মূল্যবান গয়নার মতো, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদেরকে প্লাস্টিকের খেলনার মতো যত্রতত্র ব্যবহৃত হতে দিয়েছেন। মিট দ্য প্রেসের নামে কূটনীতিকরা বার বার গণমাধ্যমের সামনে এসেছেন। মেলা, পূজা, পার্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান, এমনকি পয়োনিষ্কাশন কেন্দ্রও উদ্বোধন করতে যান রাষ্ট্রদূতেরা।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিব রুটিন করে আমেরিকার দূতাবাস আর হাসপাতালে বেগম জিয়াকে দেখতে যেতেন। হিরো আলমকে বস্তিতে বাধা দেওয়া হলো, হিরো আলম ছুটলেন মার্কিন দূতাবাসে। কিছুদিন পর ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা নিয়ে মানুষ মার্কিন দূতাবাসে ছুটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বার বার দূতাবাসে যাওয়ার মাধ্যমে বিএনপি এবং সিভিল সোসাইটি নিজেদের নতজানু মনোভাব প্রমাণ করেছে। জনগণের প্রতি আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেই তারা বারবার ছোটেন দূতাবাসে। তাদের এই নতজানু নীতিই কূটনীতিকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে প্ররোচিত করেছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং বিশ্বের দরবারের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাওয়া একটা দেশের জন্য তা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
আরও সংবাদ
[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত
[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত
[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র
[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
[১]রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসসহ নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: ইকবাল সোবহান চৌধুরী

[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত

[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত

[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র

[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
